নিজেকে আরও উন্নত করার জন্য, নিয়মিত কিছু ভালো অভ্যাস তৈরি করা খুবই জরুরি। এটা অনেকটা নিজের ভেতরের জঙ্গলটাকে পরিষ্কার করার মতো। রোজ একটু একটু করে সময় দিলে, খারাপ অভ্যাসগুলো দূর হয়ে যায় আর ভালো কিছু করার ইচ্ছেটা আরও জোরালো হয়। আমি নিজে চেষ্টা করে দেখেছি, ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন আনলেই জীবনে অনেক বড় প্রভাব পড়ে। এখন প্রশ্ন হল, এই অভ্যাসগুলো কিভাবে তৈরি করতে হয়?
আসুন, এই বিষয়ে আরও স্পষ্টভাবে জেনে নিই।
নিজেকে প্রশ্ন করার অভ্যাস তৈরি করুন
নিজেকে প্রশ্ন করা মানে নিজের ভেতরের চিন্তাগুলোকে খুঁটিয়ে দেখা। আমরা সাধারণত যা ভাবি, সেটা কেন ভাবি বা সেটার পেছনের কারণ কী, সেটা জানাটা খুব জরুরি। ধরুন, আপনি একটি কাজ শুরু করতে ভয় পাচ্ছেন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আমি কেন ভয় পাচ্ছি?” হতে পারে আগে এমন কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছিল যা থেকে খারাপ ফল এসেছিল। যখন আপনি কারণটা জানতে পারবেন, তখন সেই ভয় কাটানোর উপায়ও খুঁজে বের করতে পারবেন।
নিজের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করুন
আমরা সবাই জানি আমাদের কিছু দুর্বল দিক আছে। কিন্তু সেগুলোকে স্বীকার করতে বা সেগুলোর উন্নতির জন্য কাজ করতে চাই না। দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করে সেগুলোর উপর কাজ করলে, আপনি দেখবেন অনেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যাচ্ছে।
নিজের ভালো গুণগুলোকেও জানুন
খারাপ দিকগুলো যেমন জানতে হয়, তেমনই ভালো দিকগুলো সম্পর্কেও ধারণা রাখা উচিত। আপনি কী কী ভালো করতে পারেন, সেটা জানলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং নতুন কিছু করার উৎসাহ পাওয়া যায়।
দিনের শুরুটা করুন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি আপনি সেই জিনিসগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানান যেগুলো আপনার কাছে আছে, তাহলে মনটা ভালো হয়ে যায়। এটা অনেকটা ইতিবাচক চিন্তাভাবনা দিয়ে দিন শুরু করার মতো। যখন আপনি কৃতজ্ঞ হন, তখন ছোটখাটো সমস্যাগুলোও বড় মনে হয় না।
একটি তালিকা তৈরি করুন
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি তালিকা তৈরি করুন। সেই তালিকায় লিখুন আজকের দিনে কী কী ভালো ঘটেছে বা কী কী জিনিসের জন্য আপনি কৃতজ্ঞ।
কৃতজ্ঞতা ডায়েরি ব্যবহার করুন
একটা ডায়েরি রাখতে পারেন যেখানে আপনি প্রতিদিনের কৃতজ্ঞতাগুলো লিখে রাখবেন। মাঝে মাঝে সেই ডায়েরিটা উল্টে দেখলে বুঝতে পারবেন আপনার জীবনে কত কিছু আছে যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ থাকতে পারেন।
শারীরিক কার্যকলাপকে অভ্যাসে পরিণত করুন
শারীরিক কার্যকলাপ শুধু শরীরকে ভালো রাখে না, মনকেও সতেজ রাখে। আপনি যদি প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য হাঁটেন বা যোগা করেন, তাহলে দেখবেন আপনার কাজের ক্ষমতা অনেক বেড়ে গেছে।
নিজের জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন
কাজের ফাঁকে একটু সময় বের করে ব্যায়াম করার জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন। প্রথমে হয়তো একটু অসুবিধা হবে, কিন্তু ধীরে ধীরে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।
বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম চেষ্টা করুন
একই ধরনের ব্যায়াম করতে করতে অনেক সময় একঘেয়েমি চলে আসে। তাই বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম যেমন – দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, নাচ ইত্যাদি চেষ্টা করতে পারেন।
নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন
নতুন কিছু শেখা মানে নিজের দিগন্তকে প্রসারিত করা। এটা হতে পারে কোনো নতুন ভাষা শেখা, কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখা অথবা নতুন কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করা। যখন আপনি নতুন কিছু শেখেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক আরও সচল থাকে এবং নতুন চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে।
অনলাইন কোর্সগুলোতে অংশ নিন
বর্তমানে Coursera, Udemy-এর মতো অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে যেখানে আপনি বিনামূল্যে বা সামান্য খরচে নতুন কিছু শিখতে পারেন।
বই পড়ার অভ্যাস করুন
বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। আপনি যে বিষয়ে আগ্রহী, সেই বিষয়ে বই পড়ুন। এতে আপনার জ্ঞান বাড়বে এবং নতুন কিছু জানতে পারবেন।
অন্যের জন্য কিছু করুন
অন্যের জন্য কিছু করা মানে নিজের ভেতরের মানবতাকে জাগানো। যখন আপনি কাউকে সাহায্য করেন, তখন আপনার মনে শান্তি আসে এবং আপনি বুঝতে পারেন যে আপনি কারো জীবনে পরিবর্তন আনতে পেরেছেন।
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করুন
বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিতে পারেন। এতে আপনি সমাজের জন্য কিছু করতে পারবেন এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন।
কাউকে সাহায্য করুন
রাস্তায় কোনো অসহায় মানুষকে দেখলে তাকে সাহায্য করুন অথবা আপনার পরিচিত কারো সমস্যা হলে তার পাশে দাঁড়ান।
অভ্যাস | উপকারিতা | কীভাবে শুরু করবেন |
---|---|---|
নিজেকে প্রশ্ন করা | নিজের চিন্তা ও অনুভূতির কারণ জানতে পারা | প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করুন |
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ | ইতিবাচক চিন্তাভাবনা তৈরি করা | প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছু জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান |
শারীরিক কার্যকলাপ | শরীর ও মনকে সতেজ রাখা | প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করুন |
নতুন কিছু শেখা | মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা | অনলাইন কোর্স বা বইয়ের মাধ্যমে নতুন কিছু শিখুন |
অন্যের জন্য কিছু করা | মানসিক শান্তি এবং অন্যের জীবনে পরিবর্তন আনা | স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করুন বা কাউকে সাহায্য করুন |
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
আমরা অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখি না। পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। এতে আপনার শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক ঠিক থাকবে।
ঘুমানোর আগে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন
মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে নীল আলো বের হয়, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন।
নিজের জন্য সময় বের করুন
দিনের মধ্যে কিছুটা সময় শুধু নিজের জন্য রাখুন। সেই সময় আপনি যা করতে ভালোবাসেন, তাই করুন। এটা হতে পারে গান শোনা, বই পড়া অথবা প্রকৃতির মাঝে হাঁটা।
মেডিটেশন করুন
মেডিটেশন মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ কমায়। প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিটের জন্য মেডিটেশন করুন।
প্রকৃতির মাঝে সময় কাটান
প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে মন ভালো হয়ে যায়। তাই মাঝে মাঝে সবুজ গাছপালা বা নদীর ধারে সময় কাটান।
লেখা শেষ করার আগে
এই অভ্যাসগুলো আপনার জীবনকে আরও সুন্দর ও সহজ করে তুলতে পারে। এগুলো কঠিন কিছু নয়, শুধু একটু চেষ্টা আর ইচ্ছার প্রয়োজন। নিজের প্রতি যত্ন নিন এবং একটি সুন্দর জীবনযাপন করুন। এই অভ্যাসগুলো আপনাকে আরও আত্মবিশ্বাসী এবং সুখী করে তুলবে। তাই আজ থেকেই শুরু করুন!
দরকারি কিছু তথ্য
১. প্রতিদিন সকালে ১৫ মিনিটের জন্য ধ্যান করুন, এটি আপনার মনকে শান্ত রাখবে।
২. সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ৩০ মিনিটের জন্য হাঁটুন, এটি আপনার শরীরকে সুস্থ রাখবে।
৩. নতুন কিছু শেখার জন্য অনলাইন কোর্স বা শিক্ষামূলক ভিডিও দেখতে পারেন।
৪. বন্ধুদের সাথে সময় কাটান, এটি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখবে।
৫. রাতে ঘুমানোর আগে একটি বই পড়ুন, এটি আপনাকে ভালো ঘুমাতে সাহায্য করবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সারসংক্ষেপ
নিজের ভেতরের চিন্তাগুলোকে জানতে নিজেকে প্রশ্ন করার অভ্যাস করুন। দিনের শুরুটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে করুন এবং যা আছে তার জন্য খুশি থাকুন। শরীরকে সুস্থ রাখতে শারীরিক কার্যকলাপ করুন ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। নতুন কিছু শিখুন যা আপনার দিগন্তকে প্রসারিত করবে। অন্যের জন্য কিছু করুন, এতে আপনার মনে শান্তি আসবে। নিজের জন্য সময় বের করুন এবং যা করতে ভালো লাগে তাই করুন। এই অভ্যাসগুলো আপনার জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: ভালো অভ্যাস তৈরি করতে কতদিন সময় লাগে?
উ: সত্যি বলতে, এর কোনো বাঁধা ধরা সময় নেই। কারো এক সপ্তাহ লাগতে পারে, আবার কারো কয়েক মাস। আমি যখন প্রথম মেডিটেশন শুরু করি, তখন প্রথম কয়েকদিন খুব কঠিন লেগেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আসলে, এটা নির্ভর করে আপনি কতটা নিয়মিত চেষ্টা করছেন আর আপনার ইচ্ছাশক্তি কতটা শক্তিশালী তার ওপর। তাই হাল ছাড়বেন না, লেগে থাকুন!
প্র: একটা খারাপ অভ্যাস দূর করতে গিয়ে যদি বারবার ব্যর্থ হই, তাহলে কী করা উচিত?
উ: ব্যর্থতা জীবনের একটা অংশ। আমি মনে করি, ভেঙে না পড়ে নিজের ভুলগুলো থেকে শেখা উচিত। কেন বারবার একই ভুল হচ্ছে, সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে একজন বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের সাহায্য নিন। ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করুন, যেমন – আজ সিগারেট খাবো না, বা আজ Junk food খাবো না। যখন একটা ছোট লক্ষ্য পূরণ হবে, তখন দেখবেন আত্মবিশ্বাস বাড়ছে।
প্র: ভালো অভ্যাস ধরে রাখার জন্য কোনো টিপস আছে?
উ: অবশ্যই! প্রথমত, নিজের Progress ট্র্যাক করুন। একটা জার্নাল বা ডায়েরিতে প্রতিদিনের ভালো কাজগুলো লিখে রাখুন। দ্বিতীয়ত, নিজেকে পুরস্কৃত করুন। যখন একটা বড় লক্ষ্য পূরণ হবে, তখন নিজেকে একটা ছোটখাটো Treat দিন। তৃতীয়ত, মনে রাখবেন Consistency-ই আসল। একদিন ভালো কাজ করে পরের দিন হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। রোজ একটু একটু করে চেষ্টা করতে থাকুন, দেখবেন একসময় এটা আপনার জীবনের একটা অংশে পরিণত হয়েছে। আর হ্যাঁ, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে ভুলবেন না!
📚 তথ্যসূত্র
Wikipedia Encyclopedia
구글 검색 결과
구글 검색 결과
구글 검색 결과
구글 검색 결과
구글 검색 결과